হজ্জ্ব-ওমাহকারীদের কিছু ভুল: তাওয়াফ এবং আরাফায়(হজ্জ্বে)
তাওয়াফের সময় হজ ও উমরাকারীদের কতিপয় ত্রুটি:
কা‘বা শরীফের তাওয়াফের সময় কতিপয় হজ ও উমরাকারীদের অনেক ত্রুটি
পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের ভুল ত্রুটিতে আপনি যাতে লিপ্ত না হন সে জন্য তেমনি
কিছু ভুলের ব্যাপারে আমরা আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি।
- কতিপয় তাওয়াফকারী কাবার সকল রুকন ( কর্ণার ) এবং হয়ত বা সকল
দেয়াল স্পর্শ করে থাকে। তারা মাকামে ইবরাহীম সহ এগুলোকে মাসেহ করে থাকে।
অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী
ছাড়া কা‘বার অন্য কোন অংশ স্পর্শ করেন নি।
- কিছু লোক তাওয়াফের সময় আওয়াজ উচ্চ করে। এতে বাকী তাওয়াফকারীদের
অসুবিধা হয়। অনুরূপভাবে হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন করার জন্য এবং মাকামে
ইবরাহীমের পেছনে নামায আদায়ের জন্য অনেকে প্রচন্ড ভীড় সৃষ্টি করে। এতে
নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ ঘটে। অনেক সময় গালাগালি ও হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যায়।
এমনটি করা জায়েয নেই; কেননা এতে নারী-পুরুষের ফেতনা সৃষ্টি হয় এবং
মুসলিমদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। তদুপরি অন্যায়ভাবে কোন মুসলিম তার ভাইকে গালি
দেয়া, মারধোর করা কখনোই জায়েয নয়।
মূলত: যে ব্যক্তি আপনার ব্যাপারে ত্রুটি করেছে অথবা আপনার প্রতি
দুর্ব্যবহার করেছে তার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শনই হওয়া উচিত এ স্থানে আপনার
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
- তাওয়াফকারীদের কেউ কেউ তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশেষ
দো‘আ নির্ধারণ করে থাকে, যা তারা এ ব্যাপারে প্রণীত গ্রন্থাবলী থেকে পাঠ
করে থাকে। এটা নতুন উদ্ভাবিত সে বেদআ’ত সমূহেরই অন্তর্গত দ্বীনের মধ্যে যার
কোন ভিত্তি নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তাওয়াফের
মধ্যে হাজারে আসাওয়াদের কাছে এসে তাকবীর পড়া ছাড়া অন্য কোন যিকর বা দো‘আ
সাব্যস্ত হয়নি। আর প্রত্যেক চক্করের শেষে হাজারে আসাওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর
মধ্যবর্তী স্থানে তিনি বলতেন :
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
“হে আমাদের রব! আপনি দুনিয়ায় আমাদেরকে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও
কল্যাণ দান করুন। আর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে হেফাযত করুন।’’ [সুরা আল
বাক্বারা: ২০১]
সুতরাং প্রথম চক্করের জন্য, দ্বিতীয় চক্করের জন্য, ….. এমনি করে সপ্তম
চক্কর পর্যন্ত কোন চক্করের জন্যই বিশেষ কোন দো‘আ পাঠে নিজেকে বাধ্য না করা
হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণেরই অন্তর্গত। হজ্জ্বে তাওয়াফ , সায়ী, আরাফাতের ময়দান ইত্যাদিতে প্রাণভরে নিজের ইচ্ছামত দোয়া করা যায়। এমনকি নিজের ভাষায় নিজের প্রয়োজনে ইচ্ছা মত দোয়া করা যায়।
‘আরাফার দিন হাজীদের যে সকল ভুল হয়ে থাকে :
‘আরাফার দিন কতিপয় হাজীদের পক্ষ থেকে কিছু ভুল সংঘটিত হয়ে থাকে। এ ধরনের
কিছু ভুল আমরা আপনার সামনে তুলে ধরছি যেন আপনি তা থেকে বেঁচে থাকতে পারেন।
১. কতিপয় হাজী সাহেব ‘আরাফার সীমানার বাইরে অবস্থান করেন। অথচ স্পষ্ট
চিহ্ন দ্বারা এর সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে সচেতন করা ও
দিক-নির্দেশনা দেয়ার ব্যাপারে বহু চেষ্টা- সাধনা করা হয়। কিন্তু তাদের
তাড়াহুড়োর কারণে এবং আগেভাগে ‘আরাফা থেকে বের হয়ে যেতে চাওয়ার কারণে এ মহান
রুকনটি পালনে তারা ব্যর্থ হয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘‘হজ হল ‘আরাফায় অবস্থান।’’
২. কোন কোন হাজী পাহাড়ে উঠার জন্য কষ্ট করে এবং পাহাড় ও পাহাড়ের পাথর
সমূহ মাসেহ করে থাকে। তাদের বিশ্বাস হল – এ পাহাড়ের এমন বৈশিষ্ট্য ও ফযীলত
রয়েছে যার ফলে সে কাজ করা ওয়াজিব। অথচ এটা এমনই এক বেদ‘আত যা পরিহার করা
উচিত। ওয়াজিব তো হল – ‘আরাফার সীমানার ভেতরে যে কোন স্থানে হাজীদের অবস্থান
করা।
৩. বহু হাজী ‘আরাফার দিন হাসি, ঠাট্টা ও অনর্থক বাক্যালাপে ব্যতিব্যস্ত থাকে এবং এ মহান স্থানে যিকর, দো‘আ ও ইস্তেগফার করা ছেড়ে দেয়।
৪. অনেক হাজী দো‘আর সময় ক্বেবলাকে পেছনে, ডানে কিংবা বাঁয়ে রেখে পাহাড়ের
দিকে মুখ ফিরায়। অথচ সুন্নাত হলো পাহাড়কে আপনার ও ক্বেবলার মাঝখানে রাখা
যদি তা সম্ভব হয়। আর যদি তা সম্ভব না হয় – অত্যাধিক ভীড়ের কারণে এ
দিনগুলোতে সচরাচর এমনই হয় - তাহলে সুন্নাত হলো দো‘আর সময় আপনার সামনে
পাহাড় না থাকলেও ক্বেবলামুখী হওয়া।
৫. সূর্যাস্তের পূর্বেই কোন কোন হাজী ‘আরাফা থেকে চলে যায়। এমনটি জায়েয
নেই। হাজীদের উচিত হল যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য অস্ত না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত
‘আরাফা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করত: বের
না হওয়া, যিনি হজের কাজ পালনকালে বলেছিলেন :
«خُذُوا عَنِّى مَنَاسِكَكُم»
“আমার কাছ থেকে তোমরা হজের বিধান গ্রহণ কর”।
৬. কোন কোন হাজী ‘আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন কালে তাড়াহুড়ো করে এবং
তালবিয়া পাঠ থেকে বিরত থাকে। তার সমস্ত আগ্রহ হল – কত দ্রুত মুযদালিফায়
পৌঁছতে পারবে। অথচ উত্তম হল-হাজী সাহেব ধীর -স্থির ও শান্তভাবে পথ চলবেন।
তাড়াতাড়ি করার স্থানে তাড়াতাড়ি করবেন এবং ভীড়ের স্থানে শান্ত ভাবে এগুবেন।
প্রত্যেকটি স্থানে তার শ্লোগান হবে তালবিয়া।
No comments:
Post a Comment